মফস্বলের নাট্য ঝরে মাতলো কলকাতা, আকাঙ্ক্ষা নাট্যমেলা ২০২৫....
কলকাতার তৃপ্তি মিত্র সভাগৃহে ৩রা সেপ্টেম্বর,বুধবার বিকেল থেকেই জমে উঠেছিল নাটকের উজ্জ্বল আবহে। মফস্বলের তরুণ নাট্যদল গোবরডাঙ্গা আকাঙ্ক্ষার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো আকাঙ্ক্ষা নাট্যমেলা ’২০২৫।
এইদিনের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম-এর স্মৃতির উদ্দেশে।
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সুনন্দা বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষার সম্পাদিকা তনুশ্রী দেবনাথ (দত্ত)।
এক মিনিট নীরবতা পালনের পর তাঁর পথিকৃতিতে মাল্যদান এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে।
উদ্বোধনের মুহূর্ত থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই উৎসব কেবলমাত্র নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য নয়, বরং মফস্বল ও শহরের নাট্যচর্চাকে একই সূত্রে বেঁধে দেওয়ার এক আন্তরিক প্রয়াস।
বহুদিন ধরেই এই দল মফস্বল থেকে উঠে এসে শহুরে নাট্যচর্চায় এক বিশেষ আসন তৈরি করেছে, আর এবারের নাট্যমেলা যেন সেই যাত্রারই আরেক সার্থক অধ্যায়। বিকেল পাঁচটায় উৎসবের শুভ সূচনা হয়
এরপর পরপর মঞ্চে আসে চারটি প্রযোজনা। প্রথমেই উলুবেরিয়া অবসর নাট্য সংস্থার পরিবেশনা একটি অবাস্তব গল্প, নির্দেশনায় চন্দন সাহা। বাস্তবের সীমার বাইরে দাঁড়িয়ে মানবমনের টানাপড়েনকে নাটকটি ফুটিয়ে তোলে। দ্বিতীয় নাটক চৌর্য্য গাথা , প্রযোজনা সাউথ কলকাতা স্বাইন, নির্দেশনা অমিত ভট্টাচার্য। সামাজিক প্রেক্ষাপটে লুকিয়ে থাকা কাহিনি নাটকের মধ্যে দর্শককে ভাবিয়ে তোলে। তৃতীয় প্রযোজনা গোবরডাঙ্গা নাট্যায়নের শেষ কোথায়, যেখানে অনিশ্চিত সময়ে মানুষের টিকে থাকার লড়াই মঞ্চে উঠে আসে। আর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে টালিগঞ্জ স্বপ্নমৈত্রীর নাটক শিরদাঁড়া আনসোল্ড দিয়ে, নির্দেশনায় ইন্দ্রনীল মুখার্জি।
সমকালীন সমাজের অস্থিরতা ও মানসিক ভাঙনের প্রতিচ্ছবি এই প্রযোজনা দর্শকদের গভীরভাবে আলোড়িত করে। মঞ্চে প্রতিটি নাটকেই ছিল ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, অভিনয়শৈলী ও মঞ্চকল্পের অভিনবত্ব। দর্শকদের জন্য যেন প্রতিটি প্রযোজনাই হয়ে উঠেছিল নতুন অভিজ্ঞতা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি সুনন্দা বিশ্বাস বলেন আকাঙ্ক্ষা নাট্য সংস্থার চির শুভাকাঙ্ক্ষী তিনি। শুধু মফস্বলেই নয় এক শহর থেকে আর এক শহরে তাদের শুভ প্রচেষ্টা ছড়িয়ে পড়ুক। সমাজ দর্পণের ইতিকথা তরুণ প্রজন্ম অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করুক।
উৎসবের শেষে সম্পাদিকা তনুশ্রী দেবনাথ দত্ত বললেন, “আমরা চাই মফস্বলের নাট্যচর্চা যেন শহরে সমান মর্যাদা পায়। তরুণ প্রজন্মকেই আমরা এই যাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চাই, কারণ তারাই আগামী দিনের নাট্যমঞ্চকে আলোকিত করবে।” আকাঙ্ক্ষা নাট্যমেলা ’২৫ শেষ হলেও, তার আবহ রয়ে গেল দর্শকদের হৃদয়ে। মফস্বল আর শহরের সীমানা ভেঙে থিয়েটারের এক মিলনমেলা যেন নতুন প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে উঠল এই দিনে।